রোজার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নিজের জীবনকে সুন্দর করি - ALLKOTHA

Breaking

Post Top Ad

এখানে বিজ্ঞাপন দিন

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Monday, June 4, 2018

রোজার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নিজের জীবনকে সুন্দর করি


সিয়াম পালন করছি। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের জন্য খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থেকে কষ্ট ভোগ করছি। ভাবছি, এর মাধ্যমে না-জানি আমি কত পুণ্য অর্জন করেছি। সওয়াবের ভাগীদার হয়ে যাচ্ছি। এতেই বুঝি আমি মুত্তাকি হয়ে গেলাম। না খেয়ে আমি সংযমী হয়ে গেছি। এই তো এখনই জান্নাত আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে!

কোনো ক্ষুধার্তকে কি আমরা দেখেছি? দেখেছি কি কোনো পিপাসার্ত মানুষকে? ওদের ঘরে খাবার নেই। ওদের ঘরে কোনো পানীয় নেই। ওদের জীবনে কত কষ্ট। হে সায়েম, রোজা পালনে ওদের কষ্টগুলো কি অনুভব করেন? ওদের এ কষ্ট নিবারণে আমার আপনার কী ভূমিকা রয়েছে। ঠাণ্ডা শরবতে আমাদের দিল হয় প্রশান্ত। কিন্তু ওদের দিল? রকমারি ইফতারে আমাদের তৃপ্তি হয়। কিন্তু ওদের মুখে কিছু দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষুধার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে।হে সায়েম, দৈনিক নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য পানাহারথেকে বিরত থাকাই কি সিয়াম? সত্যিকার অর্থে এটি মুমিনের সিয়াম নয়। প্রিয় নবীজি (সা.) কী বলেছেন? তার বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের সিয়াম মেলে কিনা একটু মিলিয়ে দেখুন। তিনি বলেছেন, ‘কিছু রোজাদার রয়েছে যাদের জন্য ক্ষুধার কষ্ট ভোগ ছাড়া সিয়ামের কিছুই নেই।’ (ইবন মাজাহ : ১৬৯০)। আহ! সওয়াবের আশায় এত কষ্ট করে না খেয়ে না পিয়ে দিন পার করে দিলাম অথচ খুব পিপাসার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া হল না। কিন্তু কেন?
তাহলে বলতে পারেন, সিয়াম আমাদের জীবনে কী প্রভাব ফেলছে? এ উপবাসের মাধ্যমে নিত্য যারা উপবাসী তাদের কথা কি একবারও মনে পড়ে আমাদের? ওরাও তো আমার আপনার দ্বীনি ভাইবোন। ওরা কেমন আছে? কী দিয়ে ওরা ইফতার করছে। সেহরির আয়োজনে তাদের কী প্রস্তুতি রয়েছে? হে সায়েম দায়িত্বের হাত প্রসারিত করে খুঁজে খুঁজে তাদের প্রাপ্য পৌঁছে দিতে হবে। ওদের জীবনের একটু কষ্টের ভাগ নেয়া এবং তা দূর করে বাস্তব পদক্ষেপ নিলে আমাদের সিয়াম পূর্ণতা পাবে।
হতে পারে এটাই তার জন্য হেদায়েতের অসিলা হয়ে যাবে। তার মাঝে সৃষ্টি হবে নতুন এক অনুশোচনা। তখন দরিদ্র ভাইবোনদের জন্য কেঁদে উঠবে মন। রোজা রাখতে হবে এবং পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে। হে ব্যবসায়ী! আপনি সিয়াম পালন করছেন। কিন্তু মিথ্যা বর্জন করছেন কি? সিয়াম আপনাকে মিথ্যা থেকে বিরত রাখছে কি? রোজা রাখা অবস্থায় মিথ্যার আশ্রয় নেয়া মানে আপনি সায়েম হতে পারেননি। একই সময়ে সিয়ামও পালন করবেন আবার মিথ্যাও বলবেন, এটা কীভাবে হয়? মানুষকে ঠকাবেন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়াবেন আবার সিয়ামও পালন করবেন, এটা কীভাবে সম্ভব? এগুলোর সঙ্গে সিয়ামের কোনো সম্পর্ক নেই, এসব করলে কেউ সায়েম হতে পারবে না। এগুলো সায়েমের জন্য বিষতুল্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মিথ্যা কথন ও এর ওপর রচিত অভ্যাস ত্যাগ করতে পারল না আল্লাহর জন্য কোনো প্রয়োজন নেই সে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকল বা পানি পান থেকে বিরত থাকল।’ (বুখারি : ১৯০৩)।
আরও একটি বিষয়। রোজা মুখে কি কেউ কাউকে গালি দিতে পারে? অর্থহীন ঝগড়া-ফ্যাসাদ বা মারামারিতে লিপ্ত হতে পারে? অযথা তর্ক বা বিতর্কে জড়াতে পারে? অশ্লীলতা বা নগ্নতা ইত্যাদিতে মগ্ন হতে পারে? না এবং না। কিছুতেই এটা হতে পারে না। কারণ, সিয়াম তাকে হিফাজত করবে। সাওমের ঢাল ব্যবহার করে সায়েম (রোজাদার) নিন্দনীয় এসব কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। এ জন্যই তো নবীজি (সা.) বলেই দিয়েছেন, ‘আস সাওমু জুন্নাহ’ অর্থাৎ ‘সাওম ঢালস্বরূপ’। তাই সে যেন অশ্লীলতায় না জড়ায়, অজ্ঞতা থেকে বিরত থাকে, কোনো ব্যক্তি যদি তার সঙ্গে মারামারি করতে আসে বা গালাগাল করে তবে সে যেন বলে দেয়, ‘ইন্নি সাইমুন’ অর্থাৎ আমি রোজাদার। ব্যক্তি এটা বলবে দু’বার। অর্থাৎ তোমার সঙ্গে ঝগড়া-ফ্যাসাদ, তর্কবিতর্ক বা মারামারি করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। (বুখারি : ১৮৯৪)। অতএব, আসুন রোজার প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নিজের জীবনকে সুন্দর করি, জান্নাতি পথে পরিচালিত করি।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here