বর্তমানে বিয়ে নিয়ে Tuffahul Jannat Maria র চমৎকার বিশ্লেষণ - ALLKOTHA

Breaking

Post Top Ad

এখানে বিজ্ঞাপন দিন

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Sunday, June 10, 2018

বর্তমানে বিয়ে নিয়ে Tuffahul Jannat Maria র চমৎকার বিশ্লেষণ


Tuffahul Jannat Maria

বর্তমানে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা দেখলে মনে হয় কিছুক্ষণ পর স্টার জলসা কিংবা স্টার প্লাসের কোন একটা সিরিয়াল শুরু হবে, তার একটা মডেলিং চলছে। রং চং মাখা কমিউনিটি সেন্টার,বর- কনের রাজা - রানী টাইপের সাজ,প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার এনে শুয়ে,বসে,চিৎ হয়ে,কাত হয়ে হাজার খানেক ছবি তোলা তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্রমাগত ছবি পোস্ট করা এবং কেউ কেউ এমনভাবে পোস্ট করতেই থাকে থামার নাম নেই,কারো কারো ক্ষেত্রে বিরক্তির সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়। না, প্রচলিত সাজ সজ্জার বিরুদ্ধে কিছুই বলছি না কারণ বলে কোন লাভ নেই। শুধু এইটুকু বলতে পারি, বেশিরভাগই সামর্থ্যের বাইরে লোক দেখানো আয়োজন করতে গিয়ে লাখ লাখ টাকার ঋণখেলাপি হয় কন্যার বাবা এবং ওদিকে পাত্র। এর পেছনে আমাদের মেয়েদের দোষ অস্বীকার করার উপায়ই নেই। কন্যার আগেই শর্ত দেওয়া থাকে' আমার বান্ধবী এত লাখ টাকার লেহেঙ্গা নিয়েছে আমাকে এর চেয়ে বেশি প্রাইজের দিতেই হবে। বান্ধবীরটা বাংলাদেশি কিন্তু আমারটা আনতে হবে ইন্ডিয়া থেকে অর্ডার করে। কসমেটিক্স আর গয়না হতে হবে অমুক সিরিয়ালের নায়িকাদের মতই।'
.
গয়না এবং কসমেটিক্সের প্রতি মেয়েদের অাকর্ষণ স্বভাবজাত এটা অস্বীকার করার উপায় নেই কিন্তু সেই অাকর্ষণ যদি চাল ফুঁড়ে আকাশ ছুঁইছুঁই করে এবং তার বলি হতে হয় কন্যার বাবা এবং তার স্বামীকে তাহলে সেটা অযাচিত আবদার। সেই আবদারের সামিল হয় আমাদের খালা এবং ফুপুগণ কেননা আমাদের শান্ত শিষ্ট খালা-ফুপুরা তখন হয়ে উঠেন চরম আগ্রাসী। কথায় কথায় শোনাতেই থাকেন এবং পারলে জামাইয়ের মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বলে 'এইডা কোন শাড়ি হইছে? এইগুলা আমাদের বাসার কাজের বেটি কুলসুমের মায়েও পরে না। তোর জামাই এত কিপটা? এত বাজে ব্র্যান্ডের মেকাপ,লিপস্টিক তো বস্তির মেয়েরাও ইউজ করে না। তোর জামাই এইগুলা দিছে কোন আক্কেলে?'
ব্যাপারটা এমন---- গয়না, কসমেটিক্স এসব হচ্ছে ভাত- মাছ যা না পেলে তাদের মেয়ে দুর্ভিক্ষ হয়ে মারা যাবে। এতে যে মেয়ের সায় থাকে না, এমন কিন্তু না। শুধু সাজসজ্জার জিনিস কিনতেই যদি বেতনের অর্ধেক টাকা ব্যয় হয় তবে সংসারের উন্নতি কোনদিক থেক হবে সেটাই বুঝি না। কন্যাপক্ষের আরও একটা চতুরতার কাজ হচ্ছে বরের সামর্থ্যের বাইরে দেনমোহর নির্ধারণ। কোনদিন যদি বিয়ে ভাঙে তাহলে বরের ঘাড়ে ধরে সেই টাকা আদায়। মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে যদি এই ধারণা পোষণ করা হয় ----বিয়ে ভাঙলে স্বামীর টাকা ছাড়া সে বাঁচতেই পারবে না তাহলে এত কষ্ট করে শিক্ষিত করেই বা লাভ কী? কন্যাপক্ষের এই বাজে মানসিকতা দূর হওয়া উচিত। আর তার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে মেয়েকেই। দেনমোহর একটা বিধান কিন্তু সেটা সামর্থ্যের বাইরে নির্ধারণ করতেই হবে তার কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।
.
এবার আসি বরপক্ষের কথায়।' চার বিয়ে করা জায়েজ ' এর পক্ষে তারা যতটুকু সাফাই গায় তার কিছুমাত্র যদি যৌতুকের বিরুদ্ধে কথা বলত তাহলে মেয়ের বাবা- মার দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হত না। তাদের যদি জিজ্ঞেস করেন কোন প্রেক্ষাপটে কোরআনে চার বিয়ের এই আয়াত নাজিল হয়েছিল আমি নিশ্চিত তারা বলতে পারবে না। যদি জিজ্ঞেস করি ভাইজান এটা জানেন? ' যে লোকের দুইজন স্ত্রী আছে কিন্তু তাদের প্রতি সমতা এবং পূর্ণ ইনসাফ করতে পারল না তবে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে তার শরীরের একাংশ অবশ হয়ে থাকবে। (ইবনে মাজাহ ১৯৬৯)। ' আপনি তর্ক করে বলতে পারেন 'আমি সমতা করতে পারব।' তবে সূরা নিসার ১২৯ নম্বর আয়াত পড়ে দেখেন সেখানে প্রথমাংশে বলা আছে ' তোমরা যতই ইচ্ছা করো না কেন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি কখনো সমতা করতে পারবে না।' এরপরেও যারা তর্ক করবে তাদের নিজেদের কপটতা প্রকাশ পাবে। কথাটা এই কারণেই বললাম বর্তমানে এই বিষয়ে যত লাফালাফি হচ্ছে তার বিন্দুমাত্র কথা যৌতুক নামক হারাম প্রথা নিয়ে হচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে তারা কোন কথা বলে না, মুখে সুপার গ্লু লাগিয়ে বসিয়ে থাকে কেননা এটা নাকি 'গিফট '। এটা নাকি তাদের এলাকার ঐতিহ্য। কেমন নোংরা ট্রেন্ড আপনাদের যার নোংরা বলি হতে হয় কন্যাপক্ষকে? এরকম ভিখারিদের ঝাঁটাপেটা করা উচিত। সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে ভাঙা থালা তাদের ঠিকানায় কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিন এবং সাথে পাঠিয়ে দিন চিরকুট ' যাও চান্দু ফার্মগেটের ওভারব্রিজের উপর বসে বসে তোমাদের ঐতিহ্য পালন কর। '
তাদের নিজেদের বোন যখন একই অবস্থার শিকার হয় তখন এদের হুশ হয়,মরাকান্না জুড়ে দেয়। নিজেদের আতে ঘা না লাগা পর্যন্ত এদের জ্ঞান হয় না। কিছু বলতে গেলেই পারলে লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে আসে। এইসব শিক্ষিত দু'মুখো সাপদের জন্য এই নোংরা ভিক্ষাপ্রথা দূর হবে না। পারলে গোষ্ঠীসুদ্ধো এসে নতুন বউয়ের উপর হামলে পড়ে ' তোমার বাপের বাড়ির মানুষজন এত ফকিন্নি! আমাদের হীরার টুকরো ছেলেকে এইগুলা দিছে। ছি ছি!' আমি বলি কি হীরার টুকরো ছেলেকে বিয়ে না দিয়ে যাদুঘরে রাখলেই হয়। যুগে যুগে এভাবেই হৈমন্তীরা মরবে আর তার জন্য দায়ী থাকবে অপুর মত ভেড়ামার্কা কাপুরুষ স্বামী। একটা মেয়ের পরিবার ভালো করেই জানে তাদের মেয়েকে কী কী দিতে হবে এবং সেগুলো তারা নিজের মেয়েকে খুশি মনেই দেয়, সেগুলো আপনাকে ভিখারির মত চেয়ে চেয়ে নিতে হবে না।
যৌতুকের নামে ভিক্ষাপ্রথাকে দূর করতে চাইলে ছেলেকে নিজে প্রমিজ করতে হবে এবং দৃঢ় কণ্ঠে বলতে হবে এই ভিক্ষাপ্রথাকে সে সমর্থন জানায় না। একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইলে প্রথমে নিজে ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে।
.
কন্যা হিসেবে আমি সর্বপ্রথম বিবেচনা করব আমার বাবার এবং যিনি বিয়ে করবেন তার কতটুকু সামর্থ্য আছে। আর হ্যাঁ, আমার কাছে বিলম্বিত দেনমোহর বিষয়টা ভাল লাগে না। আমার মনে হয় এমন অ্যামাউন্ট হওয়া উচিত সেটা যেন আগেই পরিশোধ করতে পারে।
.
পরিশেষে এটাই বলব---
আমাদের দাদা-দাদি,চাচা-চাচি, মা-বাবা তাদের একে অন্যের বন্ধন শো অফের গোডাউন না হয়ে বরং ভালোবাসার উদাহরণ হয়ে আছে এবং থাকবে আর আমরা শুধু বিবেচনা করি আমার কোন বন্ধু কত লাখ টাকা খরচ করল এবং সেই প্রতিযোগিতায় জিততে হলে সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে আয়োজন করতে হবে। যেটা ধর্মীয় এবং সামাজিক বন্ধন সেটাকে শো অফের গোডাউন বানালে অাদৌ সেখানে কোন লাভ আছে কিনা জানি না। পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সমঝোতা,
সহমর্মিতা কিছুটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতার মাধ্যমেই নিহিত হয় একেকটা পরিবারের সুখের ঠিকানা। কেবল লাখ টাকার লেহেঙ্গা এবং দামী ফার্নিচারে যে সুখ খোঁজে তার মত বোকা আর কে আছে?

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Responsive Ads Here